হরমোনের সমস্যায় ভুগছেন কি না বুঝবেন যেভাবে

শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক রাখতে হরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হরমোন এক ধরনের জৈব-রাসায়নিক তরল। আমাদের শরীরের কোনো কোষ বা গ্রন্থি থেকে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশে নিঃসরিত হয়। বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রিয়ার পর ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।

হরমোনের মাধ্যমে শরীরের সব ধরনের কার্যক্রম, গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট হয়। শরীরের সবকিছুর সাথেই হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। হরমোনে সমস্যার কারণে শরীরে হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা।

হরমোন হলো ‘জাগ্রত করা’ বা কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার। ঘুম থেকে জেগে ওঠার ক্ষেত্রে একটি হরমোন রয়েছে। এগুলো গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়ে একজন আরেকজনকে মেসেজ পাঠায় যে, তোমাকে এই কাজটি করতে হবে। তারপর তাকে সাহায্য করে এবং কাজগুলো করিয়ে নেয়।

হরমোনগুলো আবার অনেকগুলো নিয়ম-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। প্রথম হরমোন তৈরি হয়, ব্রেন থেকে। ব্রেনের হাইপোথেলামাস নামক অংশ আছে। সেখান থেকে হরমোন তৈরি হয়। প্রিটোরিগ্রান্ট অংশে চলে আসে। যা আমরা দুইভাবে ভাগ করি। একটি সামনে, আরেকটি পেছনে পিঠে তৈরি। এটা খুবই ছোট একটা অংশ। যার ওজন ১০ থেকে মাত্র ১২ গ্রাম।

এন্টিনোকট্রিকো সামনের অংশ থেকে ছয়টা হরমোন তৈরি হয়। পেছনের অংশ থেকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি হয়। পিটুইটার সামনের অংশ থেকে যে হরমোন তৈরি হয়, তারা সরাসরি কাজ করে বা অন্যান্য গ্রন্থিকে বার্তা পাঠায়।

হরমোনের সমস্যার প্রধান লক্ষণ হল হঠাৎ করে অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে যাওয়া, ত্বকে চুলকানি এবং মুড স্যুইং হল হরমোনের সমস্যার প্রধান লক্ষণ। আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে সমস্যা হলেই কিন্তু এইসব লক্ষণ দেখা দেয়। আর এই সব সমস্যা হলে একদম ঘুম ভালো হয় না, খাবার হজম হয় না, হঠাৎ হঠাৎ ঘাম দেয়, দম বন্ধ হয়ে আসে, সেই সঙ্গে পিরিয়ডসের সমস্যা, শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া, যৌনতায় সমস্যা এবং সন্তান ধারণে নানা রকম জটিলতা আসে। যে কোনও বয়সেই কিন্তু হরমোনের সমস্যা হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি। পিরিয়ডসের সময়, মেনোপজের সময় এবং প্রেগন্যান্সিতে এই হরমোনের সমস্যা কিন্তু সবচেয়ে বেশি হয়।

এছাড়াও আজকাল মেয়েদের মধ্যে স্ট্রেস খুব বেশি। ফলে খুব কম বয়স থেকেই মেয়েদের এই সমস্যা দেখা যায়। কিন্তু নিয়মিত ওষুধ খেলে, লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনলে, ডায়েট ও একেসসারসাইজ নিয়মিত করলেই কিন্তু সমস্যার সমাধান হয় অনেকখানি।

ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের সমস্যা হলে কিন্তু মুড স্যুইং অনেক বেশি হয়। মূলত পিরিয়ডসের আগে এই সমস্যা বেশি হয়। অনেক সময় এই সমস্যা এতখানি বেড়ে যায় যে দীর্ঘ সময়ের জন্য পিরিয়ডস বন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য নিয়মিত এক্সসারসাইজ করতেই হবে। সেই সঙ্গে শরীরচর্চা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন।

অনেকেরই পিরিয়ডসের সময় নানা রকম সমস্যা হয়। খুব বেশি ফ্লো হয়। পেটে ব্যথা হয়। সেই সঙ্গে বারবার টয়লেট পায়, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়। এসব হলে হতে পারে ফাইব্রয়েডের সমস্যা। বা অন্য কোনও হরমোনাল সমস্যাও হতে পারে। এসব লক্ষণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধ খান।

দিনের পর দিন ঘুম কম হওয়া, আতর্কিতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, দমবন্ধ হয়ে আসা এসবের জন্যেও কিন্তু দায়ী ইস্ট্রোজেন। ঘুম কম হলে যেমন শরীর খারাপ লাগে তেমনই ক্লান্ত লাগা, এনার্জি কম হওয়া এই সব সমস্যাও দেখা যায়।

কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই ওজন বেড়ে গেলে কিন্তু নানা সমস্যা হয়। হরমোন ঠিক করে কাজ করে না বলেই এমন সমস্যা হয়। ইনসুলিন লেভেল ঠিক না থাকা, থাইরয়েড বেড়ে যাওয়া, ওভারিতে ছোট সিস্ট থাকলে, পিসিওএস-এর সমস্যা থাকলে কারণ ছাড়াই ওজন বাড়ে। আর এতে বেশি ফ্যাট জমে পেটে। প্রয়োজনীয় ব্লাড টেস্ট করান সেই সঙ্গে মেনে চলুন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করুন কিছু খাবার।

হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে খান প্রোটিন জাতীয় খাবার। মাংস, মাছ, ডিম, দুধ হাইপ্রোটিনের উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব খাবার রাখুন। মাছ, মাংস না হলে শুধু ডিম খেলেও হরমোন ব্যালেন্স রাখা যাবে।

যে কোনো ডালেই রয়েছে প্রোটিন, যা হরমোনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই ডাল, সয়াবিন আজই খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।

বাদাম খেতে পারেন। যে কোনো বাদামের মধ্যে থাকে লিনোলেইক অ্যাসিড ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। বাদাম শরীরের হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কাঠবাদাম, আমন্ড, আখরোট খুবই উপকারী।

প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি থাকলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গাজর, বীট, ব্রকোলি, পালংশাক, মিষ্টি আলু, টমেটোর মতো সবজি হরমোনের ব্যালেন্সে সাহায্য করে।

চা হরমোনের ব্যালেন্সে চা খুব উপযোগী। তবে দুধ চা নয় আপনাকে খেতে হবে হার্বাল টি। ঘরে তৈরি ঘি বা বাটারে থাকে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে-২, যা হরমোনের ব্যালেন্সে সাহায্য করে।

নারিকেল তেলে থাকে লাউরিক অ্যাসিড ও এমসিটি, যা হরমোন তৈরিতে অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া ওজন কমাতেও সাহায্য করে নারিকেল তেল। সেই সঙ্গে মেটাবলিজম বাড়ায় এবং এনার্জি জাগায় শরীরে।

ফলমূল হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন আপেল, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো, কলার মতো হাই ফাইবারযুক্ত ফল।